"কিংবদন্তি আয়ুর্বেদ বিশারদ অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ ও সাধনা ঔষধালয়"


"কিংবদন্তি আয়ুর্বেদ বিশারদ অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ ও সাধনা ঔষধালয়"

এই ভারতীয় উপমহাদেশে আয়ুর্বেদ এর নাম সম্মুখে আসলে যে নামটি সবার নিকট প্রথমে ভেসে উঠে তিনি কিংবদন্তি আয়ুর্বেদ বিশারদ ও শিক্ষাবিদ শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ। অধ্যক্ষ শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষের নাম আসলে সকলের প্রথম যে নামটি স্মরণ হয় তা "সাধনা ঔষধালয়"

অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ আয়ুর্বেদ এ ছিলেন বিশারদ। নিজে দীর্ঘ জীবনের ছয় দশকে ধীরে ধীরে   গড়ে তুলেছেন এই মানবহিতৈষী প্রতিষ্ঠান, যা ছিল মানবসেবার এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। অর্থের মোহ কখনোই তাকে তার আদর্শ-একাগ্রতা থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। তার দরজায় গিয়ে কোনো অসহায় মানুষ দাঁড়িয়েছেন আর খালি হাতে ফিরে এসেছেন— এমন সাক্ষ্য কেউ দিতে পারবেন না।
আর্ত-দুস্থ মানুষের শেষ আশ্রয় ছিলেন তিনি। এরুপ ঘটনার সাক্ষ্য আছে, যে কোনো দুস্থ মানুষ মামলায় লড়তে পারছেন না, কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা পণের জন্য বিয়ে দিতে পারছেন না, কেউ ঋণগ্রস্ত, কেউ অভাবে পড়ে ভিটেমাটি হারিয়েছেন এরুপ অসহায়ের তিনিই যেন তিনি শেষ আশ্রয় । অকাতরে ব্যবস্থা করে দিতেন তিনি। এক মানবহিতৈষী দানবীর, যার শুধুই নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার চেতনা ছিল।

তাঁর নাম বললেই প্রথমে চোখে ভাসে একটি ছবি, তা হলো সাধনা ঔষধালয়। উপমহাদেশে আয়ুর্বেদী চিকিৎসার অন্যতম পথিকৃৎ তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান।
.
নিজের জীবনের ছয় দশকে তিলতিল করে তিনি গড়ে তুলেছেন এই প্রতিষ্ঠান, যা ছিল মানবকল্যাণে এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। টাকার মোহ তাকে আদর্শ-একাগ্রতা থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। তার দরজায় গিয়ে কোনো অসহায় মানুষ দাঁড়িয়েছেন আর খালি হাতে ফিরে এসেছেন— এমন সাক্ষ্য কেউ দিতে পারবেন না।
আর্ত-দুস্থ মানুষের শেষ আশ্রয় ছিলেন তিনি। এমনও হয়েছে যে কোনো গরিব মানুষ মা*মলায় লড়তে পারছেন না, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা পণের জন্য বিয়ে দিতে পারছেন না, কেউ ঋণগ্রস্ত, কেউ অভাবে পড়ে ভিটেমাটি হারিয়েছেন— তিনিই যেন তাদের শেষ আস্থার স্থান। অকাতরে ব্যবস্থা করে দিতেন তিনি। তার দুই হাত যেন ছিল কেবলই বিলিয়ে দেওয়ার।

১৮৮৭ সালে শরীয়তপুরে জন্মগ্রহণ করেন যোগেশচন্দ্র ঘোষ। ১৯০২ সালে ঢাকার কে এল জুবিলী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। ১৯০৪ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এফএ পাস করেন। এরপর ১৯০৬ সালে কুচবিহার কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯০৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে এমএ পাস করেন।
.
১৯০৮ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ভাগলপুর কলেজে ও ১৯১২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজে রসায়নশাস্ত্র বিষয়ের অধ্যাপনা করেন তিনি। ১৯৪৭-১৯৪৮ পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেছেন। ১৯৪৮ সালে শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। যোগেশচন্দ্র লন্ডন কেমিক্যাল সোসাইটির ফেলো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেমিক্যাল সোসাইটির সদস্য ছিলেন।

১৯১৪ সালে ঢাকায় আয়ুর্বেদ ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সাধনা ঔষধালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর গবেষণা ও সাধনার ফলে বাংলাদেশে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাপদ্ধতি ও ঔষধ প্রস্তুত প্রণালী আধুনিক মানে উন্নিত হয়। তিনি রোগ-ব্যাধির কারণ ও লক্ষণ, আয়ুর্বেদ চিকিৎসার তত্ত্ব এবং এর ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে অসংখ্য বই লিখেছেন। সেগুলো হলো—অগ্নিমান্দ্য ও কোষ্ঠাবদ্ধতা, আরোগ্যের পথ, গৃহ-চিকিৎসা, চ*র্ম ও সাধারণ স্বাস্থ্য বিধি, চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা ও মুখরোগ চিকিৎসা, আমরা কোন পথে আয়ুর্বেদ ইতিহাস।

তবে এই মানবহিতৈষী মানুষের বিদায় ছিল হৃদয়বিদারক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও তিনি দেশত্যাগ করেননি। কিন্তু হানাদারদের নৃশংসতা থেকে এমন মহাত্মার মুক্তি মেলেনি। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিলে আমরা হারিয়েছিলাম বাংলার সূর্য সন্তান কিংবদন্তি আয়ুর্বেদ বিশারদ ও শিক্ষাবিদ শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষকে। 

১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাধনা ঔষধালয়ের সদর দপ্তরের সামনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিশারদ ও শিক্ষাবিদ যোগেশচন্দ্র ঘোষ। আজকে তার এই প্রয়াণ দিবসে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। এই বঙ্গভূমি আপনার মানবহিতৈষী কর্মের জন্য সর্বদা হৃদয়ে রাখবে।

সূত্র: বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র।

✏️Run with #veda

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন