জ্ঞান অর্জন ব্যতীত, মন্তব্য কি যৌক্তিক ⁉️
জ্ঞান অর্জন ব্যতীত, মন্তব্য কি যৌক্তিক ⁉️
🔅জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মনুষ্যের করা উচিত। কারণ জ্ঞান অর্জন ব্যতীত আমরা বিদ্যা-অবিদ্যা কিংবা জাগতিক বা পারমার্থিক কোনো জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হতে পারি নাহ। জগতে বহুবিধ জ্ঞান বিদ্যমান। একজন ব্যক্তিকে যদি কোনো বিষয়ে মতামত প্রকাশ করতে হয়, তবে অবশ্যই তাহার সে বিশেষ বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। এটাই যৌক্তিক ও উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি মেডিকেল কলেজে এ পড়াশোনা না করে বা এমবিবিএস সম্পন্ন না করে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে উপদেশ প্রদান করতে চাইছেন, কিংবা একজন ব্যক্তি আইন বিষয় পড়াশোনা না করে বা বার-কাউন্সিল পরিক্ষা সম্পন্ন না করে একজন ব্যক্তির হয়ে ওকালতি করতে চাইছেন সেটা কি আমাদের সমাজ কিংবা বাস্তবিক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আপনার উত্তর যদি না হয়ে থাকে তবে আপনার বিবেক ও সিদ্ধান্তের প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম।
🔅Let's Come to the Point. সনাতন ধর্মশাস্ত্র ও তাহার মন্ত্র/শ্লোক/সূত্র সমূহ সংস্কৃত ভাষায় রচিত। গুরু-শিষ্য তথা গুরুকুল এর মাধ্যমে একজন উপনয়ন ধারণকারী শিষ্য এই নিগূঢ় জ্ঞান লব্ধ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত বর্তমান সময়ে এসে আমরা প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে কতিপয় সনাতন বিদ্বেষী ব্যক্তি প্রমুখদের আবির্ভাব হয়েছে। যারা সনাতন শাস্ত্র সমূহে নিবিড় অধ্যয়ন না করে, কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বা উৎস থেকে সে সকল শাস্ত্রের মন্ত্র/শ্লোক/সূত্র সমূহের সঠিক ব্যাখ্যা না জেনে বিভিন্ন ব্লগ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ কিংবা বিভিন্ন বিকৃত ভাষ্য থেকে বিভিন্ন মন্ত্র/শ্লোক/সূত্র তুলে ধরে শাস্ত্র সমূহকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু যখন আমরা সে সকল বেদমন্ত্র সমূহের সঠিক অর্থ অনুসন্ধান করতে যাই, তখন এমন বিষয় পরিলক্ষিত হয় যেখানে মন্ত্রের রেফারেন্স পর্যন্ত ভুল দেওয়া থাকে।
যেমন, একজন হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির জ্ঞান লব্ধ ব্যক্তির কপি-পেস্ট মন্তব্য :
🚫 দাবি ০১:- অথর্ববেদ বই ১১, অনুচ্ছেদ ৩, ভার্স ১১ এ, "পৃথিবী হচ্ছে চাল সিদ্ধ করার কড়াই আর আকাশ তার ঢাকনা",
🔅এমন রেফারেন্স সনাতন শাস্ত্রের যে নয়, তা ইতোমধ্যে স্পষ্ট। এখানক অথর্ববেদের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে অনুচ্ছেদ, বই, ভার্স কিন্তু আমরা বেদ অধ্যয়ন থেকে জানতে পারি অথর্ববেদের রেফারেন্স দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে, কান্ড/সুক্ত/মন্ত্র।
যেখানে উক্ত ব্যক্তি রেফারেন্স দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে তিনি যে প্রকৃত মন্ত্র ও তাহার অর্থ যে না জেনে কপি-পেস্ট করেছেন তা ইতোমধ্যে বোধগম্য। তবুও সকলের সংশয় নিবারণ এর জন্য নিম্নে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সনাতন শাস্ত্রের রচনা শৈলী চমকপ্রদ ও অতুলনীয়। প্রশ্ন করে তাহার উত্তর প্রদান করা বা গুরু শিষ্যের কথোপকথন কিংবা উদাহরণ দ্বারা যেকোনো বিষয় উপলব্ধি করানোর মতো এক অপূর্ব রচনাশৈলীর সন্ধান মেলে শাস্ত্রে। কঠ-উপনিষদে যম-নচিকেতা, কিংবা সূর্যের সাত ঘোড়ার উপমার মাধ্যমে সপ্ত রশ্মির ধারণা প্রদান করা এমন বহুবিধ রচনাশৈলীতে সমৃদ্ধ ধর্মশাস্ত্র। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তিগণ সে সকল জ্ঞান এর নিগূঢ় অর্থ নিরুপণ করতে না পেরে অযথা বিতর্কের সৃষ্টি করে থাকে।
🔅সত্যতা নিরূপণ ০১:-
"ইয়মেব পৃথিবী কুম্ভী ভবতি রাধ্যমানস্যৌদনস্য দ্যৌরপিধানম্।।" অথর্বেদ-১১/৩/১১
ভাবার্থ: পরমেশ্বর এত মহান যে তিনি এই পৃথিবী, সূর্য ইত্যাদি সকল লোক (জগৎ)-এ সর্বদা ব্যাপ্ত রয়েছেন।
ব্যাখ্যা: পরমেশ্বর সর্বব্যাপী। তিনি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নন; বরং তিনি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বিরাজমান। তাঁর অস্তিত্ব সব জায়গাতেই বিরাজ করে—পৃথিবী, সূর্য এবং অন্যান্য জগতেও।
🚫 কিন্তু মহাশয় এর এরুপ শঙ্কার কারণ কি? কারণ! তিনি ইংরেজি থেকে সরাসরি বাংলায় অনুবাদ করেছেন কিন্তু ভাবার্থ না জানা থাকায় এমন মনে হয়েছে। । ইংরেজি মন্ত্রটিতে বলা হয়েছে, "This earth is the pan for the boiling of rice, and the heaven is its cover."
🔅 উক্ত মন্ত্রে ঢাকনা আলংকারিক অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। একটি উপমা দ্বারা পৃথিবীর যে আবরণ সে ওজন লেয়ার সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
🔅 কিন্তু ঢাকনা অর্থে কি যথোপযুক্ত?
ঢাকনার কাজ হলো বাইরের কোন কিছুকে ভিতরে ঢুকতে বা ভিতরের কোন কিছুকে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা।
আমরা এরুপ অবগত যে এই ধরিত্রীর আকাশের বায়ু মন্ডল মহাজাগতিক অনেক ক্ষতিকর বিষয় যেমন আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিসহ আরও অন্যান্য অনেক ক্ষতিকর পদার্থকে পৃথিবীতে আসতে বাঁধা প্রদান করে। বায়ুমন্ডল একটি গ্যাসের স্তর যার 78% নাইট্রোজেন, 21% অক্সিজেন, 0.9% আর্গন, 0.03% কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অবশিষ্টাংশ বিভিন্ন ধরনের গ্যাস। পৃথিবীর আকাশের বায়ুমন্ডলের কারনে প্রায় সকল উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে পৌছানোর আগেই তা বায়ুমন্ডলের সংস্পর্শে এসে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং ভূমণ্ডল সুরক্ষিত থাকে। এছাড়াও সূর্য থেকে আসা বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ, তেজস্ক্রিয় রশ্মি, অতি বেগুণী রশ্মি যা ঘন্টায় 900000 মাইল বেগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করে। যদি সেই মহাজাগতিক রশ্মি, আয়ন এবং ইলেকট্রন কণা যদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌছতে পারে তবে উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীজগৎ ক্ষতিগ্রস্থ হতো। কিন্তু এই বায়ুমণ্ডলীয় স্তরগুলোই সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর রশ্মি ও মহাজাগতিক উল্কাপিণ্ডকে বাঁধা প্রদান করে।
আলোচ্য বিষয় থেকে ইহা স্পষ্ট যে উপমা এমন কার্যকর ছিল যা আমাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। যা বেদে পূর্বেই উল্লেখ ছিল।
🔅এমন বহুবিধ দাবি প্রদান করা সম্ভব, যা কতিপয় ব্যক্তি অজ্ঞানতাবশত করেছেন ইতোপূর্বে। কাব্য শাস্ত্রে অলঙ্কার বা উপমা কাব্যের শোভা বর্ধক। ইতিহাসখ্যাত কবিরা এমন উপমা দ্বারা কাব্যের শোভা বর্ধন করেন। যেমন, সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছিলেন:-
"পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি" কিন্তু আদৌ কি চাঁদ ঝলসানো রুটি? মূলত পূর্ণিমার আকাশে চাঁদকে ঝলসানো রুটির মতোই দেখতে লাগে।
কবি সেই উপমাই এখানে প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু কেউ যদি সে উপমার অর্থ নিরুপণ করতে না পেরে সুকান্ত ভট্টাচার্যকে চাঁদকে ঝলসানো রুটি বলার জন্য অবৈজ্ঞানিক অভিযুক্ত করে। তবে এক্ষেত্রে দোষ কার হওয়া উচিত, সুকান্ত ভট্টাচার্যের?
🔅পরিশেষে এতটুকু বলার রয়েছে, যেকোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ব্যতীত মন্তব্য করতে আসা মূর্খের সদৃশ কর্ম। কিন্তু সনাতন শাস্ত্রকে অমূলক প্রমাণ করতে সনাতন বিদ্বেষীগণ প্রতিনিয়ত এরুপ কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে।
সনাতন শাস্ত্রের অমৃত জ্ঞান সকলের জন্য উন্মুক্ত। পশ্চিমা বিশ্ব ও প্রাচ্যের বহু মনিষী সনাতন শাস্ত্র অধ্যয়ন দ্বারা নিজেদের জ্ঞানকে যেমন শাণিত করেছেন, তেমনি অকপটে প্রশংসা করেছেন এই অমৃত জ্ঞানের। কিন্তু দিকভ্রান্ত সে জ্ঞান অর্জন করার জন্য কোনো কপি-পেস্ট না অনুসরণ করে সঠিক স্থানে সে জ্ঞান অর্জন করা উচিত। নাহলে, অজ্ঞানতা অন্ধকার থেকে এই কল্পে মুক্তি সম্ভব হবে নাহ।
- Run With Veda
মন্তব্যসমূহ