"এই মনুষ্য জন্ম অতীব দূর্লভ, মোহ নয়, মুক্তি লক্ষ্য"
"এই মনুষ্য জন্ম অতীব দূর্লভ,
মোহ নয়, মুক্তি লক্ষ্য"
▪️এ জগতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে শতসহস্র বৎসর পূর্বে কিন্তু সকল প্রাণ এতটা উৎকর্ষতা লাভ করতে পারেনি, যা মনুষ্য করেছে। মনুষ্যও এই জীবকুলে বিচরণকারী প্রাণী। তবে মনুষ্য ও অপর প্রাণীর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট তবে গুরুত্বপূর্ণ এক পার্থক্য। সে পার্থক্যকে নির্দেশ করে কৌটিল্য বলেছেন,
"আহারনিদ্রা ভয় মৈথুনানি সমানি চৈতানি নৃণাং পশূনাম্। জ্ঞানং নরাণামধিকো বিশেষো জ্ঞানেন হীনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ।।" - চাণক্য নীতি ১৭/১৬
অর্থাৎ, আহার, নিদ্রা, ভয় ও মৈথুন এগুলো মানুষ এবং পশুসমূহের মধ্যে সমানরুপে পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে কেবল জ্ঞান অধিক বিশেষ, কারণ জ্ঞান কেবল মনুষ্যের মধ্যে পাওয়া যায়।
▪️সেজন্য এই মনুষ্য দেহকে সামান্য ভাবা উচিত নয়। কারণ, প্রাণীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম দেহ এই মনুষ্যদেহ। সেজন্য, এই দেহের গুরুত্ব উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কারণ, আমরা যদি কোনো বস্তুর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারি তবে সে বস্তুর সঠিক উপযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নাহ। সেজন্য এই মনুষ্য দেহকে মহিমান্বিত করে
তান্ড্য ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে,
"নরাঃ দেবানাং গ্রামঃ" - তান্ড্য ব্রাহ্মণ ৬/৯/২
অর্থাৎ, এই মানবদেহ হলো দেবগণের গ্রাম বা আবাস্থল।
▪️এই মনুষ্য দেহ অতীব উত্তম। কারণ, এই মনুষ্য দেহের মাধ্যমে জীবাত্মা কর্ম করে ও কর্মের ফল ভোগ করে। এই আট চক্র ও নয় ইন্দ্রিয় রুপ দেহনগরী অজেয়। এই নগরী সে পরমাত্মার আনন্দময় গুণের প্রভাবে আনন্দময়।
"অষ্ট চক্রা নব দ্বারা দেবানাং পুরুয়োধ্যা।
তস্যাং হিরণ্ময়ঃ কোশঃ স্বর্গো জ্যোতিষাবৃতঃ।।"
- অথর্ববেদ ১০/২/৩১
অর্থাৎ, এই শরীররূপ নগরী নব সূর্য্যাদি দেবের অধিষ্ঠানভূত। আট চক্র এবং নয় ইন্দ্রীয় দ্বারা বিশিষ্ট এইনগরী অজেয়। এই নগরীতর এক প্রকাশময় কোশ আছে (মনোময়কোষ) আনন্দময় জ্যােতি দ্বারা আবৃত।
ব্যাখ্যা: দিব্য পুরী অর্থাৎ মনুষ্য শরীর অত্যন্ত বলশালী। ইহা দুই চক্ষু, দুই কর্ণ, দুই নাসিকা, এক মুখ, এক মলদ্বার ও এক মূত্রদ্বার এই নয়টি দ্বার যুক্ত এবং ত্বক রক্ত মাংস মেদ অস্থি মজ্জা বীর্য ও ওজঃ এই আটটি চক্রযুক্ত। ইহাতে জ্যোতিষ্মান কোষ আছে তাহাই আনন্দময়।
▪️পরমাত্মা এই জগতের সকল সৃষ্টির স্রষ্টা। তবে তাহার সৃষ্টিকুলের মধ্যে মনুষ্য দেহ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। সে বাক্য ঐতরেয়োপনিষদ্ এ ঋষি বলেছেন,
"পুরুষো বাব সুকৃতম" - ঐতরেয়োপনিষদ্ ১/২/৩
অর্থাৎ, এই মানবদেহ ঈশ্বরের উত্তম নির্মাণ, তাই এটি সুকৃত।
▪️এই মনুষ্য শরীরের মহত্ত্ব বর্ণনা করে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদগীতায় এই মনুষ্য শরীরকে ক্ষেত বলে অভিহিত করেছেন।
শ্রীভগবান্ উবাচ-
"ইদং শরীরং কৌন্তেয় ক্ষেত্রমিত্যভিধীয়তে" - গীতা ১৩/২
অর্থাৎ, শ্রীভগবান বললেন- হে কৌন্তেয়(অর্জুন)! এই শরীর "ক্ষেত্র" এই নামে অভিহিত হয়।
▪️উপরোক্ত উদ্ধৃতি থেকে আমাদের এই মনুষ্য দেহের গুরুত্ব ও এর বিশেষত্ব দৃষ্ট হয়। কিন্তু এই মনুষ্য দেহের উপযোগিতা কি আমরা করতে সক্ষম হচ্ছি। অবহেলা, মোহ, মায়ার প্রভাবে আমরা এই মনুষ্য দেহের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন থেকে বিচ্যুত হয়ে অবনমিত হয়ে চলেছি। ফলস্বরূপ, কর্মবন্ধন থেকে মুক্তির পরিবর্তে চোরাবালির ন্যায় ধীরে ধীরে আরো গভীরে নিমজ্জিত হয়ে চলেছি প্রতিনিয়ত। যা থেকে মুক্তি দুরূহ।
▪️সেজন্য, হে অমৃতের সন্তানগণ! নিজের এই দেহরুপ নগরীকে জানো। নিজের প্রকৃত উদ্দেশ্যকপ উপলব্ধি করো। নিজের জীবনকে মোক্ষ অর্জনের মার্গে পরিচালিত করো। এ হোক সাধনা।
🔎Run with #veda
কথোপকথনে যোগ দিন