"ইতিহাসগ্রন্থ হতে ধর্মশিক্ষা" - ০২
"ইতিহাসগ্রন্থ হতে ধর্মশিক্ষা - ভাগ্যনির্ভরতা নাকি কর্ম"
সাধারণের মধ্যে জ্ঞানের অজ্ঞানতা হেতু এরূপ উপলব্ধি হয় যে অদৃষ্টই আমাদের জীবনের একমাত্র সহায়৷ সেজন্য, লোকসমাজে এরুপ প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, "যদি থাকে নসিবে, আপনাআপনি আসিবে"। অর্থাৎ, কর্ম বা চেষ্টা যতই করা হোক না কেন ভাগ্যে যা লেখা আছে তা হবে। এ যেন মনুষ্যের প্রতি নিদারুণ অবিচার, অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
কিন্তু সত্য সনাতন বৈদিক ধর্ম এরুপ অদৃষ্টতাকে কখনো সমর্থন করে নাহ। কারণ সত্য সনাতনে কোনো অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কোনো স্থান নেই। ঋগ্বেদে স্পষ্ট মনুষ্যের কর্ম ও চেষ্টাকে মান্যতা দিয়ে বলা হয়েছে,
"অয়ং মে হস্তো ভগবানয়ং" -ঋগ্বেদ ১০/৬০/১২
অর্থাৎ, আমার এক হাতে কর্ম,অপর হাতে বিজয়।
সনাতন ধর্মে কর্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে গণ্য করা হয়। সেজন্য আমরা কর্মফল ও জন্মান্তরবাদে মতো যুক্তিনিষ্ঠ সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করি। যেখানে মনুষ্যই তাহার গন্তব্য নির্ধারণ করে তাহার কৃত কর্ম দ্বারা।
কিন্তু এই লোকসমাজে যারা এরুপ ভাগ্য নির্ভরতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে তাদের পরিণতি শুভ নয়। কারণ, ভাগ্যের দোষ দিয়ে যাহারা উন্নতির আশা করে তাহাদের উন্নতি অসম্ভব। কিন্তু যারা কর্ম নামক পুরুষার্থকে ভরসা করে এগিয়ে আসে তারা বিশ্বজয়ী হয়। সেজন্য, ঐতিহাসিক গ্রন্থ মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
"লোকস্য নান্যতো বৃত্তিঃ পাণ্ডবান্যত্র কর্মণঃ ।
এবম্বুদ্ধিঃ প্রবর্তেত ফলং স্যাদুভয়ান্বয়াৎ ॥" - মহাভারত ৫।৭৭।১১
অর্থাৎ, পুরুষার্থ ত্যাগ করে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে মানুষের জীবন চলে না। এজন্য মানুষকে কর্মে নিযুক্ত হওয়া উচিত। তারপরে প্রারব্ধ এবং পুরুষার্থ উভয়ের মিলনে ফলের প্রাপ্তি হয়।
তাই হে অমৃতের সন্তানগণ! ভাগ্যের হাতে নিজ ভবিষ্যৎ সঁপে দিলে জীবনের চাকা কখনো এগোবে নাহ। কারণ, হিমালয় পর্বতের পাদদেশে গিয়ে শেরপা যদি ভাবে ভাগ্য তাকে চূড়ায় পৌঁছে দিবে, তবে তার আশা হতাশা হয়ে থাকবে।
"ইতিহাসগ্রন্থ হতে ধর্মশিক্ষা" - ০২
🔎 Run with #veda #krishna
মন্তব্যসমূহ