সনাতন শাস্ত্রে ভূমিকম্প সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ⁉️
▪️এ পৃথিবী দুঃখময়। কখনো ব্যক্তি আমাদের দুঃখ প্রদান করে, কখনো প্রকৃতি আমাদের দুঃখ প্রদান করে। সেজন্য, সাংখ্য দর্শন অনুসারে– "কুত্রাপি কোঽপি সুখী ন" -সাংখ্য ৬।৭ অর্থাৎ, কোথাও কেউই সুখী নয়। সনাতন শাস্ত্র অনুসারে এই জগতে দুঃখ ০৩ প্রকার হয়ে থাকে।
➡️ আধ্যাত্মিক দুঃখ– নিজের মনে হিংসা , বিদ্বেষ , অহংকার প্রভৃতি থেকে যে দুঃখ উৎপন্ন হয় ।
➡️ আধিভৌতিক দুঃখ– আশ পাশের মানুষ , জীব-জন্তু প্রভৃতি থেকে যে দুঃখ প্রাপ্ত হয় ৷
➡️আধিদৌবিক দুঃখ– ঝড় , বন্যা , খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বস্তু থেকে যে দুঃখ প্রাপ্ত হয় ।
এই ত্রৈত দুঃখ সমূহের মধ্যে আধিদৌবিক দুঃখে মনুষ্যের বা জীবের কোনো হস্তক্ষেপ থাকে নাহ। সেজন্য, এই দুঃখ সম্পর্কে জানা আবশ্যক।
আধিদৌবিক দুঃখের ভূমিকম্প অন্যতম একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ভূমিকম্প" শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ থেকে। 'ভূ' শব্দের অর্থ 'পৃথিবী' এবং 'কম্পন' শব্দের অর্থ 'দোলন' বা 'কম্পন'। সুতরাং, ভূমিকম্পের অর্থ হলো "পৃথিবীর কম্পন"।
▪️পৃথিবীর ভূ-ত্বকের আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পন, যা ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের ফলে সঞ্চিত শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে সৃষ্টি হয়। এই কম্পন ভূপৃষ্ঠকে আন্দোলিত করে এবং সিসমিক তরঙ্গ উৎপন্ন করে তাকে ভূমিকম্প বলে। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক বিষয়। কিন্তু বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় ভূমিকম্প নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন Mythology। উদাহরণস্বরূপ, গ্রিক সভ্যতায় পোসেইডন, সমুদ্রের দেবতা, তার ত্রিশূল দিয়ে সমুদ্রকে নাড়িয়ে ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারতেন। নর্স এর ইতিহাস অনুসারে র্যাগনারকের সময়, শিকল ছিঁড়ে ফেনরির নামক একটি দানবীয় নেকড়ে মুক্তি পাবে এবং পৃথিবী কাঁপবে।
▪️তবে প্রাচীন সনাতন শাস্ত্রে ভূমিকম্পের ব্যাখ্যা রয়েছে। যা যুক্তিযুক্ত ও প্রায়োগিক। অথর্ববেদে এই গতিশীল ভূমি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়েছে এবং আমরা সকলে জানি আমাদের মাটির নিচে টেকটোনিক প্লেট অবস্থিত যা গতিশীল হওয়ার কারণে অপর প্লেটের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টির হওয়ার জন্য ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
"মহৎসধস্থং মহতী বভূবিথ মহান্বেগ এজথুর্বেপথুষ্টে"
অথর্ববেদ ১২/১/১৮
অর্থাৎ, হে ভূমিমাতা ! তুমি একত্রে বসবাসের জন্য মহান স্থান । তুমি সত্যিই বিশাল । তুমি তীব্র গতিশীল । তোমার কম্পন অর্থাৎ ভুমিকম্পও অত্যন্ত প্রবল ।
এই আধিভৌতিক দুঃখ হতে পরিত্রাণের উপায় নেই। সেজন্য পরমাত্মার নিকট প্রার্থনা করা আমাদের সর্বোত্তম উপায়।
"নো ভূমির্বেপ্যমানা" - অথর্ববেদ ১৯।৯।৮
অর্থাৎ, কম্পিত ভূমি আমাদের জন্য শান্তিদায়ক হোক।
পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালঙ্কার এর তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যায় বলেছেন, এসব আধিদৈবিক কষ্ট যেন আমাদের পীড়িত না করে সেই প্রার্থনা করা হয়েছে বলে ভাবার্থে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু শুধু প্রার্থনা নয় বরং নিজেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা করার উপদেশ স্বয়ং বেদে বর্ণিত হয়েছে।
"অগ্নে হেডাꣳসি দৈব্যা যুয়োধি নঃ"- সামবেদ ১৬২৪
অর্থাৎ, হে উন্নতি সাধক জীব ! আমাদের দৈবিক কারণে হওয়া প্রকোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করো ।
সেজন্য, ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে নিজেদেরকে রক্ষার্থে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। যা আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাসকরণ ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অগ্রগামী হতে পারে।
🔆 পদক্ষেপ সমূহ:-
ভূমিকম্পের পূর্বে করণীয়:
🔗 ফার্স্ট এইড বক্স সংগ্রহে রাখা।
🔗 ভবনের নিরাপত্তা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা।
🔗 গ্যাস কিংবা বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বিচ্ছিন্ন করার উপায় জেনে রাখা।
✅ ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে করণীয়:
🔗 দ্রুত উন্মুক্ত স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
🔗 ড্রপ, কভার, এবং হোল্ড অন (Drop, Cover, and Hold On):
ড্রপ: মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ুন।কভার: কোনো শক্ত আসবাবপত্রের (যেমন - টেবিল বা ডেস্ক) নিচে আশ্রয় নিন এবং আপনার মাথা ও ঘাড়কে দুই হাত দিয়ে ঢেকে দিন। হোল্ড অন: কম্পন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আসবাবটি ধরে রাখুন।
🔗 জানালা, কাঁচ এবং বাইরের দেওয়াল থেকে দূরে থাকুন।
🔗 ঘরের আবদ্ধ থাকলে ঘরের কোণায় কিংবা শক্ত কিছু নিচে ড্রপ, কভার, এবং হোল্ড অন করে রক্ষা করুন।
⚠️ যা হতে বিরত থাকবেন:
🔗 লিফট ব্যবহার করবেন না
🔗 তাড়াহুড়ো করা যাবে নাহ
🔗 দালান, ব্রিজ এর নিচে গাড়ি কিংবা নিজে আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
✅ ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে করণীয়:
🔗 নিজেদের আশেপাশের মানুষদের সন্ধান করুন।
🔗 আহত হলে ফার্স্ট এইড বক্স ব্যবহার করে প্রাথমিক চিকিৎসা নিন।
🔗 ক্ষয়ক্ষতি অত্যাধিক হলে শুকনো খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করে রাখুন।
🔗 ধ্বংসস্তুপ থেকে দূরত্ব রাখুন যেন উদ্ধারকাজ সহজ হয়।
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেজন্য নিজেকে সচেতন রেখে সুরক্ষিত থাকি।
🔎Run with #veda