পোস্টগুলি

মার্চ, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

চক্রব্যূহ

ছবি
চক্রব্যূহ চক্রবুহ্য বা চক্রব্যূহ হলো একটি প্রাচীন ভারতীয় যুদ্ধ কৌশল বা সামরিক গঠন, যা মহাভারত মহাকাব্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি একটি জটিল, ঘূর্ণায়মান বিন্যাস, যা শত্রুদের বিভ্রান্ত করতে এবং তাদের পরাজিত করতে ব্যবহৃত হতো। চক্রব্যূহকে সাধারণত একটি গোলাকার বা চক্রাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যার মধ্যে সৈন্যরা স্তরে স্তরে সাজানো থাকে এবং ক্রমাগত ঘুরতে থাকে, যাতে শত্রুর পক্ষে এর ভেতরে প্রবেশ করা বা এর গঠন ভাঙা কঠিন হয়ে পড়ে। ✨মহাভারতের প্রেক্ষাপটে চক্রব্যূহ: মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে চক্রব্যূহের সবচেয়ে বিখ্যাত উল্লেখ পাওয়া যায়, বিশেষ করে অভিমন্যুর মৃত্যুর ঘটনায়। অভিমন্যু, অর্জুনের পুত্র, এই ব্যূহের ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, কারণ তিনি গর্ভে থাকাকালীন তার পিতার কাছ থেকে এর ভেদ করার কৌশল শিখেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তিনি ব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় জানতেন না। ফলে কৌরবদের প্রধান যোদ্ধারা—দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্য, কর্ণ, দুর্যোধন প্রমুখ—তাকে ঘিরে ফেলে এবং অসম লড়াইয়ে তাকে হত্যা করে। এই ঘটনা মহাভারতের একটি ট্র্যাজিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত। ...

"শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও উত্তম সিদ্ধান্ত" - ১

ছবি
"অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধই বিনাশের কারণ"  মনুষ্য জীবনে বিনাশকারী কোনো বস্তু বা বিষয় যদি বিদ্যমান থেকে থাকে তবে তা নিশ্চিত রুপে ক্রোধ বা  Anger issue। মনুষ্য ক্রোধান্বিত হয়ে তাহার বিচারকারী যে বিবেক তা থেকে বিস্মৃত হয়ে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, ক্রোধের বশবর্তী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কখনো কখনো সে ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের জীবনে ধংসাত্মক প্রভাব বয়ে নিয়ে আসে।  ক্রোধের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদগীতায় উল্লেখ করেছেন, "ক্রোধাদ্ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ। স্মৃতিভ্রংশাদ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি॥" - গীতা২/৬৩ সরলার্থ: ক্রোধ থেকে মোহ হয়, মোহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম, আর স্মৃতিনাশ থেকে বুদ্ধিনাশ এবং বুদ্ধিনাশ থেকে বিনাশ প্রাপ্ত হয়। আমাদের অনিয়ন্ত্রিত ইন্দ্রিয় বৃত্তির জন্যই ক্রোধের উৎপত্তি ঘটে। আমাদের ইন্দ্রিয় বা মনকে সন্তুষ্ট করতে পারে এরুপ কোনো কাজের ব্যাঘাত ঘটলে ক্রোধ জন্মে।  শ্রীমদ্ভগবদগীতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেরূপ কিছুই বলেছেন,  "ধ্যায়তো বিষয়ান্ পুংসঃ সঙ্গস্তেষুপজায়তে।  সঙ্গাৎ সংজায়তে কামঃ কামাৎ ক্রোধোহভিজায়তে...

পাকিস্তানি বাহিনী ও হিন্দু নিধন :- ০২

ছবি
"গোলাহাট গণহত্যা" বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়েও মাথা নত না করার ইতিহাস।  পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সমগ্র মানচিত্র জুড়ে চালিয়েছে বর্বর হত্যাকাণ্ড, খুন ধর্ষণ, লুটপাট। সে বর্বরতার ইতিহাসে জুড়ে আছে গোলাহাট গণহত্যা।   বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৩ জুন তারিখে সংগঠিত হয় একটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানি বাহিনী এই হত্যাকান্ডের নাম দেয় "অপারেশন খরচখাতা"। সেদিন আনুমানিক ৪৪৭ জন হিন্দু মারোয়াড়ি আবালবৃদ্ধবণিতাকে নির্বিচারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী অবাঙ্গালী বিহারী ও বাঙ্গালি রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী সম্মিলিতভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সকলে স্বাধীনতার পক্ষে ছিলো না। কেউ কেউ মাতৃভূমির স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধূলিসাৎ করতে হানাদারদের দোসরে পরিনত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উর্দুভাষী অবাঙালি বিহারিরা সরাসরি পাকিস্তানী হানাদারদের নৃশংসতায় সাহায্য করে। ফলস্বরূপ,  সৈয়দপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি বড় সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি ...

অযোধ্যা নগরী পর্ব :- ৫

ছবি
রামায়ণ ⚡ ▪️অযোধ্যা নগরী পর্ব :- ৫ অযোধ্যা নগরী পর্ব - ৫ যোধানমগ্নিকল্পানাং পেশলানামমর্ষিণাম্। সম্পূর্ণা কৃতবিদ্যানাং গুহা কেশরিণামিব। - (বাল্মীকি রামায়ণ, আদিকান্ড, সর্গ ৬, শ্লোক ২১) - গুহা যেমন তেজস্বী বীর সিংহের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে, অযোধ্যাপুরীও তদ্রুপ অগ্নির ন্যায় তেজস্বী, অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারে দক্ষ এবং অপমান-অসহনশীল যোদ্ধাদের দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল।  কম্বোজবিষয়ে জাতৈর্বাহ্লীকৈশ্চ হয়োত্তমৈঃ‌। বনায়ুজৈর্নদীজৈশ্চ পূর্ণা হরিহয়োত্তমৈঃ।। বিন্ধ্যপর্বতজৈর্মত্তৈঃ পূর্ণা হৈমবতৈরপি। মদান্বিতৈরতিবলৈর্মাতঙ্গৈঃ পর্বতাপমৈঃ।। - (বাল্মীকি রামায়ণ, আদিকান্ড, সর্গ ৬, শ্লোক ২২.২৩) - ইন্দ্রের অশ্ব উচ্চৈঃশ্রবার তুল্য কাম্বোজ, বাহ্লীক, বনায়ু এবং সিন্ধুনদতীরবর্তী দেশ সমূহে জাত অশ্বে সেই অযোধ্যাপুরী পূর্ণ ছিল। বিন্ধ্যাচল এবং হিমালয়জাত পর্বতাকার মদমত্ত অতিশক্তিশালী মাতঙ্গ (হস্তী) দ্বারা সেই অযোধ্যানগরী পূর্ণ ছিল।  শশাস শমিতামিত্রো নক্ষত্রাণীব চন্দ্রমাঃ - চন্দ্র যেমন নক্ষত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে  (ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে নক্ষত্র হলো চন্দ্রপথের ২৮ ভাগের প্রতিটির নাম যেগু...

পাকিস্তানি বাহিনী ও হিন্দু নিধন - ০১

ছবি
"ঢাপঢুপ গণহত্যা" স্বাধীনতা শুধু একটি শব্দ নয়, এ এক চেতনা যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আত্মত্যাগ এর ইতিহাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সে আত্মত্যাগ এর বিস্মৃত এক নাম ঢাপঢুপ গণহত্যা।  ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাঙালি হিন্দুদের উপর নেমে ঘোর অমানিশা। ফলস্বরূপ, সে হত্যা, ধর্ষণ ও জীবন রক্ষায় সংখ্যালঘু হিন্দুরা ভারতে পলায়নের জন্য পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার  পাঁচপীর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের ঢাপঢুপ বিলের পাড়ের আম বাগানে এসে সমবেত হয়েছিলো। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারেরা সকালে সূর্য ওঠার পর যারা রওনা হয়েছিল তাদের পিছু ধাওয়া করে পথ রোধ করে এবং যারা আম বাগানে আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরসহ নির্জন ঢাপঢুপ বিল পাড়ে জড়ো করে। এরপর লাইন করে দাঁড় করিয়ে পিছন দিক থেকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয় এবং যারা বেঁচে যান তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও খুঁচিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। একে একে তাদের লাশ ঢাপঢুপ বিলে ফেলে লাশের ওপর সামান্য মাটি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পুরুষদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছিল। ঢাপঢুপ বিল থেকে পাঁচশো গজ দক্ষিণে শুখানপুখুরি গ্রাম। যা বর্তমানে বিধবা...

অযোধ্যা নগরী পর্ব :- ৪

ছবি
রামায়ণ ⚡ ▪️অযোধ্যা নগরী পর্ব :- ৪ নাষড়ঙ্গবিদত্রাস্তি নাব্রতো নাসহস্রদঃ। ন দীনঃ ক্ষিপ্তচিত্তো বা ব্যথিতো বাপি কশ্চন।। (বাল্মীকি রামায়ণ, আদিকান্ড, সর্গ ৬, শ্লোক ১৫) - অযোধ্যায় কেউই বেদের ষড়ঙ্গে ( শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ, জ্যোতিষ) জ্ঞানহীন ছিলেন না, সহস্রদান (অপরিমিত দানশীল); করেন না এমন কেউ ছিলেন না।  কেউই ব্রতহীন (উপনয়ন সংস্কারবিহীন), দুঃখী, দরিদ্র বা বিক্ষিপ্তমনা (যার কর্মে মন নেই) ছিলেন না।  কোনও পুরুষ বা নারী শ্রীহীন ছিলেন না (কশ্চিন্নরো বা নারী বা নাশ্রীমান্) কেউই রুপহীন ছিলেন না (নাপ্যরূপবান্) রাজার প্রতি বিদ্বেষ কারো মধ্যে দেখা যেত না (নাপি রাজন্যভক্তিমান্) -৬.১৬  ✔️ এই লেখাটি পড়লে নিন্মোক্ত শ্লোক টা গুরুত্ব সহকারে পড়বেন 🙏 বর্ণেস্বগ্যচতুর্থেষু (চার বর্ণের - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র সকলেই ছিলেন-) দেবতাতিথিপূজকা (সকলেই ছিলেন দেবতা- গুরু, বিদ্বান, অগ্নিহোত্রী ও অতিথির পূজক - যথাযোগ্য সন্মান প্রদর্শনকারী।  কৃতজ্ঞশ্চ- কৃতজ্ঞ বদান্যাশ্চ - উদার এবং মিষ্টভাষী  শূরা -  বীর বিক্রমসংযুতাঃ - এবং প্রতাপশালী 🚩 - ৬.১৭ দীর্...

বিয়ে কি আবেগ এর বশে হওয়া উচিত নাকি বিবেচনা করে?

ছবি
বিয়ে কি আবেগ এর বশে হওয়া উচিত নাকি বিবেচনা করে? বিবাহ মনুষ্য জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তম সংস্কার। মনুষ্য তাহার জীবনকে আরো পরিপূর্ণতা দান ও মানবসভ্যতার অগ্রগতি স্বরুপ এই বিবাহ সংস্কার হয়ে থাকে। একজন সঙ্গী চয়নে আমাদের সকলের সচেতন ও বিচারকারী হতে হবে। নচেৎ আধ্যাত্মিক ও প্রায়োগিক জীবনে সর্বদা জীবনে পশ্চাদপসরণ নিশ্চিত।  বর্তমান কিছু ব্যক্তিদ্বয় এরুপ আরোপ করে থাকে বিয়ে আবেগ এর বশে হওয়া উচিত। কিন্তু সত্যি বিয়ে কি আবেগ এর বশে হওয়া উচিত নাকি বিচার-বিবেচনা পূর্বক হওয়া উত্তম? এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ আলাদা এবং তাহার বিচার বিবেচনা ভিন্ন। কিন্তু জীবনে কোনো এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অনুচিত যা আপনাকে সারাজীবন ধরে অনুশোচনা দিতে থাকে। সেজন্য, বিবাহ সংস্কার কিংবা জীবন সঙ্গী চয়নে কখনো আবেগ নয় বিচারবিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ উচিত। কারণ সনাতন ধর্মে বিবাহ কোনো চুক্তি নয় যে, আপনি আবেগ এর বশে বিবাহ করলেন কিন্তু পরবর্তীতে অনুশোচনা হওয়ায় বিচ্ছেদ করলেন। সনাতন ধর্মে বিবাহ সঙ্গীর সঙ্গে আত্মিক মিলন, যা আপনাকে জীবন ও লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক। সেজন্য শাস্ত্রে বলা হয়েছে,  “ব্রহ্মচর্যেণ কন্যা যুবান...

"সনাতন ধর্ম নাকি দর্শন"

ছবি
"সনাতন ধর্ম নাকি দর্শন" 📌 সাম্প্রতিক সময়ে একজন সুবোধ জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি এরুপ দাবি উত্থাপন করেছেন যে সনাতন কোনো ধর্ম নয় বরং তাহা একটি দর্শন। সে হিসেবে তিনিও একজন সনাতনী এবং পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ মাত্রই সনাতনী। আমরা ভ্রাতা অভিব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করি এবং তাহার নিজেকে সনাতনী হিসেবে দেখার যে উদার দৃষ্টিভঙ্গি সে মনোভাবকে শ্রদ্ধা জানাই।  কিন্তু ভ্রাতা একটি অভিমতের সাথে আমরা একমত হতে না পারার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। তাহার দাবি "সনাতন কোনো ধর্ম নয় বরং দর্শন"। আমরা এরুপ দাবি স্পষ্ট বিরোধিতা করি এবং সে সংশয় নিবারণে কিছু আলোচনার ভিত্তিতে তথ্য প্রমাণসহ দাবিটি খণ্ডন করছি।  প্রথমত, ধর্ম কি তা জানা আবশ্যক: সংস্কৃত শব্দ ধৃ ধাতু হতে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ ধারণ করা। স্বয়ং ঈশ্বর যে ধর্মের প্রবর্তন করেছেন;আমরা সেই চিরন্তন ধর্মের ধারক। ধর্মের আগে কোন বিশেষ্য বা বিশেষণ এর প্রয়োজন নেই যে অমুক ধর্ম, তমুক ধর্ম। সেরূপ যেমন সত্য সত্যই, ন্যায় ন্যায়ই। এদের পূর্বে কোনো বিশেষণের প্রয়োজন নেই। তেমনি ধর্ম সত্য, তাই তাকে সত্যধর্ম বলা হয়। ধর্ম শাশ্বত চিরন্তন, তাই তাকে সনাত...

ব্রহ্মজ্ঞান লাভের যোগ্য কে?

ছবি
ব্রহ্মজ্ঞান লাভের যোগ্য কে?  জ্ঞান পরম পবিত্র ও শ্রদ্ধায় আদৃত। জ্ঞান মনুষ্যকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে। সেজন্য, ধর্মশাস্ত্রে জ্ঞান অর্জন রয়েছে স্পষ্টত গুরুত্ব। তবে সে জ্ঞান যদি হয় ব্রহ্মজ্ঞান, তাহলে সে জ্ঞান অর্জনের জন্য যোগ্য হওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অপাত্রে জ্ঞান দান নিরর্থক ও ফলদায়ক নয়।  এজন্যই, প্রশ্নোপনিষদে ব্রহ্মর্ষি পিপ্পলাদ ছয়জন ঋষিপুত্রকে ব্রহ্মজ্ঞান প্রদানের পূর্বে তাহাদের যোগ্যতা পরিক্ষা করেছিলেন। যখন তারা যোগ্যতা প্রমাণ করলো তারপরই ঋষি তাহাদের ব্রহ্মজ্ঞান প্রদান করেছিলেন। সেজন্য, শান্ত, সুশীল ও শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিই ব্রহ্মজ্ঞান লাভের যোগ্য।  শ্রীমদ্ভগবদগীতায়  যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এরুপ অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন যে,  "শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংয়তেন্দ্রিয়ঃ। জ্ঞানং লব্ধা পরাং শান্তিমচিরেণাধিগচ্ছতি।।" - গীতা ৪/৩৯ অর্থাৎ, "যিনি শ্রদ্ধাবান, একনিষ্ঠ সাধন-তৎপর এবং জিতেন্দ্রিয়, তিনিই জ্ঞান লাভ করেন। জ্ঞান লাভ করার পর তিনি শীঘ্রই পরম শান্তি লাভ করেন" ॥ গূঢ় ব্রহ্মবিদ্যা সর্বসাধারণের জন্য অতি দূলর্ভ।  ব্রহ্মতত্ত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে পাত...

"বঙ্গের শিবাজি মহারাজ প্রতাপাদিত্য"

ছবি
"বঙ্গের শিবাজি মহারাজ প্রতাপাদিত্য" মোঘল আধিপত্যের বিরুদ্ধে গর্জে উঠার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এর ইতিহাস অধ্যয়নের চেষ্টা করলে সর্বাগ্রে যে সুমহান বীরের নাম আসে, তিনি হিন্দু হৃদয় সম্রাট ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ ও তাহার মারাঠি সাম্রাজ্য। অকুতোভয় সংগ্রাম, দুঃসাহসিক অভিযান, সমরকৌশল এর অপূর্ব শ্রেষ্ঠত্বের সুনিপুণ দূর্গের নাম ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ। সে হিন্দু জাগরণ ও স্বরাজ এর চেতনার জন্য মারাঠি সাম্রাজ্য সর্বদা সম্মানের সুউচ্চ আসনে আসীন থাকবে।  তবে আমাদের বঙ্গে তেমনি এক বীরের উত্থান ঘটেছিলো মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনাধীন সময়ে। ইতিহাসবিদেরা সে অকুতোভয় বীরকে বঙ্গের শিবাজি বলে সম্বোধন করে থাকে। তবে সে বীর ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ এর আবির্ভাব এর পূর্বে মোঘল আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি যশোহরের রাজা 'মহারাজ প্রতাপাদিত্য" মহারাজা প্রতাপাদিত্য গুহরায় ১৫৬১ থেকে –১৬১১ খ্রি পর্যন্ত বঙ্গদেশের যশোহর সাম্রাজ্যের নৃপতি, মুঘল শাসনাধীন ভারতে স্বাধীন "স্বরাজ" এর আদর্শ স্থাপন করতে চাওয়া দুঃসাহসপ বাঙ্গালী সম্রাট। ষোড়শ শতকের সূচনায় যখন সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে মুঘল সাম্র...

সনাতন ধর্ম কি উগ্রতাকে সমর্থন করে ⁉️

ছবি
🔅 সনাতন ধর্ম কি উগ্রতাকে সমর্থন করে ⁉️ 📌 সনাতন ধর্ম শান্তি ও সৌহার্দ্যের আদর্শকে ধারণ করে। মনুষ্যত্ববোধ, ন্যায়, উদারতা, পরমতসহিষ্ণুতা সনাতনীদের ইতিহাসের এক স্বর্ণালি অধ্যায়। এ জগতের প্রতিটি প্রাণীকে অমৃতের সন্তান হিসেবে সম্বোধন, সমগ্র পৃথিবীকে এক পরিবার, প্রাণী মাত্রই মিত্রের দৃষ্টিতে দেখার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।  সাম্প্রতিক সময়ে দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে হওয়া কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবিধ সমালোচনার উদয় ঘটেছে যে পরমতসহিষ্ণুতার ধারক হিসেবে প্রসিদ্ধ সনাতনীগণ কি উগ্রতাকে সমর্থন করে ? পৃথিবীতে প্রতিটি অন্যায় নিন্দনীয় এবং অমার্জনীয়। জগতের মাঝে সকলের অধিকার রয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গড়ে তোলার। অপরের উপর দমন পীড়ন, নিষ্ঠুরতা কিংবা যেকোনো অন্যায় মানবতার বিরুদ্ধে। একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে সকলের উচিত সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে প্রতিবাদ করা।  সনাতন ধর্ম শান্তি ও সৌহার্দ্যের ধারক। জগতের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা প্রতিটি সনাতনীর শাস্ত্রীয় শিক্ষা। সেজন্য একমাত্র সনাতন ধর্মে প্রতিটি ধর্মীয় কার্য শেষে বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্য বিশ্বশান্তি ...

ধর্ষণ প্রতিরোধে কি করণীয় ⁉️

ছবি
ধর্ষণ প্রতিরোধে কি করণীয় ⁉️ "সূর্য উদয় কবে হবে, হবে বিনাশ অসুরের  পাপীরা কবে পাবে শাস্তি, বিচার হবে ধর্ষণের" মনুষ্য আজ সভ্যতার চরম শিখরে। প্রাচীন বর্বর যুগ অতিবাহিত করে আজ আমরা সভ্য হিসেবে গড়ে উঠেছি। তবে আমরা সভ্যতাকে গ্রহণ করলেও বর্বরতাকে সম্পূর্ণরুপে পরিত্যাগ করতে পারিনি। বর্তমান সময়ে এসেও কিছু মানুষ রুপী অসুরেরা আমাদের চতুর্দিকে ব্যপ্ত হয়ে আছে। যাদের হাতে সংঘটিত হচ্ছে সভ্য যুগের অসভ্য, বর্বর কার্যক্রম। সেই বর্বরতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ধর্ষণ।  নারী সমাজের অলংকার, জ্ঞানের জৌতি, গৃহের আলো সে নারীর প্রতি এমন অসভ্য বর্বরোচিত কর্ম কদাপি গ্রহণযোগ্য হতে পারে নাহ। শাস্ত্রেও নারীর প্রতি অসম্মানজনক কিংবা বর্বরোচিত কর্মের শাস্তির বিধান কঠোর। যেমন মহর্ষি মনু বলেছিলেন,  পরদারাভিমর্ধেষু প্রবৃত্তান্নৃন্মহীপতিঃ। উদ্বেজনকরৈর্দন্ডৈশ্চিহ্নয়িত্বা প্রবাসয়েৎ"   -মনুস্মৃতি- ৮/৩৫২   অর্থাৎ, যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্ত্যক্ত করে বা ব্যভিচারে প্ররোচিত করে, তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়। কিন্তু উপর্যুক্ত...

সনাতন শাস্ত্র অনুসারে "উত্তম আহার"।

ছবি
"উত্তম আহার" ◾খাদ্য শুধুমাত্র ক্ষুধা নিবারণের জন্য নয় বরং দেহ ও মনের উপর অপূর্ব প্রভাব বিস্তার করে থাকে। শুধু ক্ষুধা নিবারণের জন্য যদি হতো তবে উত্তম আহার হিসেবে বিবিধ অরুচিকর খাদ্য পরিগণিত হতো কিংবা খাদ্য শুধু জিহ্বার স্বাদের জন্য হতো তবে সুস্বাদু খাওয়ার অস্বাস্থ্যকর হতো নাহ। সেজন্য, আহার হতে হয় উত্তম, স্বাস্থ্যকর।  তবে কোন প্রকৃতি আহার উত্তম এবং কোন ধরনের খাদ্য আমাদের বর্জন করা উচিত ⁉️  ◾শ্রীমদ্ভগবদগীতা যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত অমৃতবাণী। জীবনের বহুবিধ সংশয় নিবারণে গীতা অতুলনীয়। শ্রীমদ্ভগবদগীতা আহার এর শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে এবং কোন আহার উত্তম ও কোন আহান গ্রহণ অনুচিত সে বিষয়ে উপদেশ প্রদান করা হয়েছে।  আহার ০৩ প্রকার। তিন প্রকার স্বভাবজাত প্রকৃতির ব্যক্তির আহারও একইভাবে ত্রিবিধ।  🔅সাত্ত্বিক আহার  🔅রাজসিক আহার  🔅তামসিক আহার "আহারস্তুপি সর্বস্য ত্রিবিধো ভবতি প্রিয়ঃ। যজ্ঞস্তপস্তথা দানং তেষাং ভেদমিমং শৃণু" ॥  - গীতা ১৭/৭ অর্থাৎ, সকল প্রাণীর প্রিয় আহারও তিন প্রকার হয়ে থাকে; আর সেরূপ যজ্ঞ, তপস্যা ও দান। তাদের এই পার্থক্য শ্রবণ করো। ◾স...

অযোধ্যা নগরী পর্ব :-৩

ছবি
 রামায়ণ ⚡ ▪️অযোধ্যা নগরী পর্ব :-৩ তস্মিন্ পুরবরে হৃষ্টা ধর্মাত্মানো বহুশ্রুতাঃ। নরাস্তুষ্টা ধনৈঃ স্বৈঃ স্বৈরলুব্ধাঃ সত্যবাদিনঃ৷৷ নান্নসন্নিচয়ঃ কশ্চিদাসীৎ তস্মিন্ পুরোত্তমে মাগী | কুটুম্বী যো হাসিদ্ধার্থোহগবাশ্বধনধান্যবান্॥  (বাল্মীকি রামায়ণ, আদিকান্ড, সর্গ ৬, শ্লোক ৬-৭) —সেই শ্রেষ্ঠ নগরীর অধিবাসীরা সকলেই ছিলেন আনন্দিত, ধার্মিক, শাস্ত্রজ্ঞ, নির্লোভ, সত্যবাদী এবং স্ব-স্ব উপার্জিত ধনে সদাই সন্তুষ্ট। সেই উত্তম পুরীতে সকলেই ছিল আত্মীয়বৎসল। সকলেই ছিল বহুসঞ্চয়ী, পুরুষার্থযুক্ত এবং গোরু-অশ্ব-ধন-ধান্যবানে পরিপূর্ণ।  অযোধ্যতে কোথাও কখনও কামুক ব্যক্তি (কামী) কৃপণ, বিকৃতিযুক্ত (কদর্যো) নিষ্ঠুর বা ক্রূর ব্যক্তি (নৃশংসঃ পুরুষঃ),  অশিক্ষিত এবং নাস্তিক ব্যক্তি (নাবিদ্বান্ ন চ নাস্তিকঃ) দেখা যেত না। - ৬.৮  সকল নরনারীই ছিল ধর্মপরায়ণ ও সংযমী -  (সর্বে নরাশ্চ নাৰ্যশ্চ ধর্মশীলাঃ সুসংযতাঃ) মুদিতাঃ (হৃষ্টচিত্ত)  শীলবৃত্তাভ্যাং মহর্ষয় ইবামলাঃ (স্বভাব ও আচরণে তাঁরা ছিল মহর্ষিদের মতো নির্মল চিত্ত) - ৬.৯ নাকুন্ডলী (কুন্ডলবিহীন)  নামুকুটী (মুকুটহীন), ...

যদি সবকিছু বেদে থাকে তবে বিজ্ঞান অধ্যয়ন, চর্চা ও আবিস্কার এর কি প্রয়োজন ⁉️

যদি সবকিছু বেদে থাকে তবে বিজ্ঞান অধ্যয়ন, চর্চা ও আবিস্কার এর কি প্রয়োজন ⁉️  🔅 বেদ মনুষ্যের জন্য আলোক জৌতি স্বরুপ। বেদের অমৃত জ্ঞান যেরুপ নিখুঁত তেমনি বিস্ময়কর। বেদের জ্ঞান মনুষ্যকে শুধু মোক্ষ অর্জনের পথে পরিচালিত করে এমন নয়, বরং আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক, আধিদৈবিক বিবিধ জ্ঞান প্রদান করে এবং জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করে। সেজন্য বেদের জ্ঞানকে আশ্চর্য হিসেবে গণনা করা দোষের কিছু নয় বরং যথাযথ।  🔅বর্তমানে সময়ে এসেও বেদ জ্ঞানের ধারক হিসেবে প্রসিদ্ধ সনাতনীগণই বেদবিমুখ অবস্থানে। ফলস্বরূপ, বেদের অত্যাশ্চর্য জ্ঞান থেকে অমৃতের সন্তানগণ রয়েছে আলোকবর্ষ দূরে। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে, সনাতনী ভ্রাতা-ভগিনীগণ বেদের অমৃত জ্ঞান আস্বাদনে এগিয়ে আসছে।  🔅তারই ধারাবাহিকতায় বেদের মধ্যে বিজ্ঞানের তত্ত্বীয় জ্ঞান ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে, ছড়িয়ে পড়ছে সকলের মাঝে, পুনঃ উত্থান ঘটছে আর্যত্বের। কিন্তু কিছু সংশয়ী সেই অগ্রগতিতে প্রকাশ করছে সংশয়। সেই সংশয় নিবারণ করা একজন সনাতনী ধর্ম প্রচারকারী সেবায়েত হিসেবে মোদের কর্তব্য।  🔅অজ্ঞেয়বাদীদের মতে, যদি সবকিছু বেদে থাকে তবে বিজ্ঞান ...